গঙ্গামতির রাখাল-(পর্ব-আট)
গঙ্গামতির রাখাল-(পর্ব-আট)
Novel Cover Photo
দিন গেলো। রাত গেলো। সপ্তাহ গেলো। মাস গেলো। শিলার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হবে। দু’একদিন বাকি। সন্তান প্র্রসবের যন্ত্রনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু। শিলা ক্লান্ত হতে আরাম্ভ করল। বাপের ঘরের বিছানায় শুয়ে অসহ্যকর যন্ত্রনায় ছটফট করছে। এমনভাবে ছটফট করছে অনেকের চোখ বেয়ে অশ্র“ পরছে আবার কেউ কেউ উপহাস করে বলছে ডং করে। শিলা যে ডং করে নাই তা প্রমান করে চলে গেছে পরপারে একসাথে দু’টো যমজ সন্তান জন্ম দিয়ে। একটানা বিরামহীন পাঁচদিন অসহ্যকর প্রসব বেদনার পর গভীর তমস্রা রাতে প্রথম একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার সময় শিলা মূর্ছিত হয়ে গেলো। ঘন্টা খানেক পরে অন্য কন্যা সন্তানটি পৃথিবীর আলো ও বাতাসের গন্ধ পেল শিলার মূর্ছিত অবস্থায়। একবার অচেতন হয়ে গেলো আর নয়ন মেলে দশ মাস দশ দিন যে সন্তান নিজের জীর্ণ শরীরের রক্ত চুষে পৃথিবীর আলো বাতাসের প্রেরণ করল, পূর্ণিমার কলংকহীন চাঁদের মতো সোনামনিদের মুখ দু’টো দেখতে পারে নাই।
শিলার দেহের খাঁচায় বন্দি প্রান পাখিটা কখন যে দেহ শূন্য করে উড়ে গেছে কেউ বলতে পারে নাই। শিলা গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার মাটির কলসির জল- বন্যায় কুড়িয়ে পাওয়া সাগরের পাড়ে পিতলের গ্লাসে খেতে পারে নাই। অচেতন হবার ঘন্টা খানেক আগে এক গ্লাস জল খেয়েছে বটে- তা রাখাল পাড়ার কলসির পানি না, বড়হরপাড়া গ্রামের ফকির বাবার ফুক দেওয়া পানি। রাখাল পাড়ার শেষ পানি শিলার অলিকে বিধাতা কর্তৃক লেখা ছিল না-তা কে জানত ?
শিলার দেহের খাঁচায় বন্দি প্রান পাখিটা কখন যে দেহ শূন্য করে উড়ে গেছে কেউ বলতে পারে নাই। শিলা গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার মাটির কলসির জল- বন্যায় কুড়িয়ে পাওয়া সাগরের পাড়ে পিতলের গ্লাসে খেতে পারে নাই। অচেতন হবার ঘন্টা খানেক আগে এক গ্লাস জল খেয়েছে বটে- তা রাখাল পাড়ার কলসির পানি না, বড়হরপাড়া গ্রামের ফকির বাবার ফুক দেওয়া পানি। রাখাল পাড়ার শেষ পানি শিলার অলিকে বিধাতা কর্তৃক লেখা ছিল না-তা কে জানত ?
যখন সকলের সন্দেহ হলো শিলা বেঁচে নাই মরে গেছে তখন ঝামেলা বিবি ছিড়া বালিশের ফুটা দিয়ে এক টুকরা তুলা হাতে নিয়ে শিলার নাকের ডগায় ধরল- শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করার জন্য। ঝামেলা বিবি জিহ্বায় কামড় খেয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চুপ করে বসে রইল। শানু ঘরামী ব্যাপারটা বুঝে শিলার হাতের কব্জি ধরে নাড়ি পরীক্ষা করে বলল,
‘জেন্দা নাই, মইর্যা গ্যাছে’।
সবাই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। মনুর কাঁন্না আরো বেশী, এদিকে প্রানের প্রিয় শিলার জন্য অন্যদিকে নবাগত রাখাল পাড়ার ফুটফুটে বাচ্চা দুটির জন্য। কে করবে লালন-পালন? কার বুকের পুষ্টিকর দুধ খাবে? কে দিবে ওদের মায়ের আদর স্নেহ ? কেনইবা পাষান ফেরেস্তা যমদূত- সকল খেলার মহা-পরিচালক, সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, সকল শাসনের মহা-শাসক, সকল সুখ-দুঃখ-হাসি-কাঁন্নার নির্দেশক স্বয়ং বিধাতার ইশারায় দুটো নবজাতক শিশুকে এতিম করে, প্রান পাখি থাকার খাঁচা খালি করে শিলার প্রানটা কেঁড়ে নিলো ?
গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার কাঁন্নার শব্দ আকাশে-বাতাসে মিশে আশেপাশের দু’চারটি গ্রামে পৌছে গেলো। সকাল হতে না হতেই হাসেম জোমাদ্দারের কন্যা রেনু ও কবিলা চাতুরী বেগম আসল। হাসেম জোমাদ্দার রাতেই আসছিল। রাখাল পাড়ার হৃদয় বিদারক করুণ কাহিনী দেখে কার না চোখে জল আসে ? রেনুর চোখে আসে আবার আসে না। কারন রেনুর মনের অফুরন্ত আশা এবার বাস্তবায়িত হবার একটা বাঁধা দূর হলো। রেনু বারোং বার শোকান্ত মনুর দিকে চেয়ে কি যানো দেখে? নিজেকে সামাল দিতে না পেরে মনুর সন্নিবেষ্টিত হয়ে রেনু বলে, ‘কান্দিস না যা অইছে তা আর ফিরাইতে পারবি না’।
মনুর কাঁন্নার বেগ আরো বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হলো। কাঁন্না বিজরিত কন্ঠে বলে, ‘রেনু মোর এবিল হইল ক্যান’?
রেনু মায়াবী কন্ঠে নরম হাত মাথায় বুলিয়ে বলে, ‘কান্দিস না কোন লাভ অইবে না’।
‘জেন্দা নাই, মইর্যা গ্যাছে’।
সবাই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। মনুর কাঁন্না আরো বেশী, এদিকে প্রানের প্রিয় শিলার জন্য অন্যদিকে নবাগত রাখাল পাড়ার ফুটফুটে বাচ্চা দুটির জন্য। কে করবে লালন-পালন? কার বুকের পুষ্টিকর দুধ খাবে? কে দিবে ওদের মায়ের আদর স্নেহ ? কেনইবা পাষান ফেরেস্তা যমদূত- সকল খেলার মহা-পরিচালক, সকল রাজার রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, সকল শাসনের মহা-শাসক, সকল সুখ-দুঃখ-হাসি-কাঁন্নার নির্দেশক স্বয়ং বিধাতার ইশারায় দুটো নবজাতক শিশুকে এতিম করে, প্রান পাখি থাকার খাঁচা খালি করে শিলার প্রানটা কেঁড়ে নিলো ?
গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার কাঁন্নার শব্দ আকাশে-বাতাসে মিশে আশেপাশের দু’চারটি গ্রামে পৌছে গেলো। সকাল হতে না হতেই হাসেম জোমাদ্দারের কন্যা রেনু ও কবিলা চাতুরী বেগম আসল। হাসেম জোমাদ্দার রাতেই আসছিল। রাখাল পাড়ার হৃদয় বিদারক করুণ কাহিনী দেখে কার না চোখে জল আসে ? রেনুর চোখে আসে আবার আসে না। কারন রেনুর মনের অফুরন্ত আশা এবার বাস্তবায়িত হবার একটা বাঁধা দূর হলো। রেনু বারোং বার শোকান্ত মনুর দিকে চেয়ে কি যানো দেখে? নিজেকে সামাল দিতে না পেরে মনুর সন্নিবেষ্টিত হয়ে রেনু বলে, ‘কান্দিস না যা অইছে তা আর ফিরাইতে পারবি না’।
মনুর কাঁন্নার বেগ আরো বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুন হলো। কাঁন্না বিজরিত কন্ঠে বলে, ‘রেনু মোর এবিল হইল ক্যান’?
রেনু মায়াবী কন্ঠে নরম হাত মাথায় বুলিয়ে বলে, ‘কান্দিস না কোন লাভ অইবে না’।
কান্না কাটি আর শান্তনার মাঝে চাঁনমিয়া এলাকার কয়েক জনের সমন্বয়ে খোনতা ও কোদাল দ্বারা শিলার জন্য মাটির ঘর তৈরী করা হয়ে গেলো। শেষ বারের মতো শুয়ে দিলো শিলার মৃতদেহ গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে। গঙ্গামতির রাখাল পাড়ার নবাগত কন্যা শিশুদের অষ্পষ্ট কাঁন্নার শব্দে আশেপাশের গাছপালা ও বুনো ঘাস কাঁদছে।
রাখাল দলের রাখ্খালি গাভীর স্তনের দুধ বোতলে ভরে শিশু জোড়া লালন পালনের জন্য সকলের চেষ্টা অব্যাহত রইল। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসের হাতে থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলো রাখাল পাড়ার অসহায় গরিব-দুঃখি মানুষ গুলো। দিন তিনে পরে একটি শিশু বিদায় নিয়ে চলে গেলো নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে। তার চার দিনের মাথায় অন্য শিশুটার প্রানটা কেঁড়ে নিতে আজরাইলের মোটেও হৃদয় কাঁপে নাই। পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার প্রমান গঙ্গামতির এই গ্রামটি। বাংলাদেশের পল্লী কবি মরহুম জসিম উদ্দিনের বিখ্যাত “কবর” কবিতার মতো আর একটি কবিতা রচনা হয়ে গেলো এই রাখাল পাড়ার “গোরস্থান”। তাই চাঁনমিয়া রাখাল পাড়ার পারিবারিক গোরস্থানে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে কবিতার সুরে কয়,
“গোরস্থান”
“গোরস্থান”
হে গোরস্থান আর কত দেহ কত দেহ নিবা তুমি,
শুরুতেই দিলা আপন ভাইর তর তাজা প্রানে চুমি।
সেদিন ভাইয়ে মোর গিয়েছিল সাগরের লোনা জলে,
ঝাঁকে ঝাঁকে জালে রূপালী ইলিশ মাছ ধরিবার ছলে।
ছেয়ে-মেয়ে লয়ে সুখ শান্তিতে ভাত খাইবার তরে,
জীবিত ফিরিয়া আসিতে পারেনি গঙ্গামতির চরে।
খোঁজা খুঁজি করে নিজের ভাইরে পেলাম দু’দিন পরে,
গঙ্গামতির মাইল তিনেক উজানে বালুর চরে।
দেখি ভাই মোর ঘুমাইয়া আছে বালু মস্তের তলে,
সতেজ দেহের চামড়া-গোশ্ত গেছে গঙ্গার জলে।
কুঁড়িয়ে আনিয়া তারে শোয়াইয়া দিলাম তোমার কোলে,
গোশ্ত বিহীন শরীরের খাঁচা কঠিন মাটির তলে।
চাপলীর হাটে যাইবার কালে ডাকিয়া ধরিত গলা,
তুমি যাইবা না ! ‘দাদা চল যাই’ চলিতেছে যাত্রা পালা।
আমারে ছাড়িয়া একাকি কোথাও যাইতো না কোন দিন
তাই বাজিতেছে হৃদয়ের মাঝে সেই বেদনার বীন।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার দেশেতে
হে গোরস্থান !
কিছু দিন পরে তোমারই কোলে নিলা ভাইয়ের বধূ,
সোনার মতন মুখ খানি তার কথায় জড়িত মধু।
মরার সময় ছিল দুনিয়াতে অজয় ধারায় ঝড়,
তুমুল বৃষ্টি দমকা বাতাসে প্রান কাঁপে থরে থর।
সে সন্ধ্যাবেলা গিয়াছিল বনে আনতে ছাগল ছানা,
কেওড়া গাছের তলে চাপা পরে ভাঙ্গিয়া গেল ডানা।
কিছুক্ষন পরে প্রান পাখি উড়ে চলে গেল বহু দূরে,
কান্না কাটির জোয়ার বইল রাখাল পাড়ার তরে।
ভাসাইয়া দিলো রাখাল পল্লী লোচনের লোনা জলে,
আসমান কাঁদে সমীরণ কাঁদে কাঁদে ভাইয়ের ছেলে।
ভাইয়ের মেয়ে ছোট্ট ময়না কিছু বোধ করে নাই,
মায়ের বুকের দুগ্ধ খাইতে বারণ করনা ভাই!
ধবল বসনে আতর ছিটিয়ে দিলাম তোমার কোলে,
কোনদিন আর আসবে না ফিরে মনুর মায়ের ছলে।
মনু ও ময়না কাহার সোহাগে মানুষ হইবে ভাই,
এই দুনিয়ায় আপন বলিতে অনাথের কেহ নাই।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার বুকেতে
হে গোরস্থান !
নিঠুর পাষান হে গোরস্থান আর কত নিবা হায়,
পালাক্রমে নিলা আবুলের প্রান আজও কান্দে মায়।
আবুল মোদের গাঁয়েরই ছেলে রাখাল পাড়ায় গড়া,
মোদেরই গাঁয়ে ফিরিয়া এসেছে বাছা জীবিত না মরা।
যুয়ান আবুল সেদিন দুপুর বেলা ঝাঁপ দিয়ে পড়ে,
তুফানের মাঠে নির্দয়া প্রান কাঁড়া সাগরের তোড়ে।
জীবিত ফিরিয়া আসিতে পারেনি গঙ্গামতির তীরে,
তাজা শরীরের চামড়া নিয়েছে কাঙ্গোট মাছে ছিড়ে।
আবুল জানিত যদি ভাসমান বস্তু কাঁড়িবে প্রান,
তাহলে কি আর গঙ্গার জলে ঝাঁপ দিয়ে পরে কন ?
তিনদিন পরে খোঁজাখুঁজি করে পেলাম একটু দূরে,
গঙ্গামতির মাইল পাঁচেক পুবে ভিজা বালু চরে।
পঁচা-গলা দেহ চিনিবার মতো শক্তি ছিল না কারো,
রাখাল পাড়ার মেয়ে-ছেলে-বুড়ো হয়েছে কতক জড়ো।
কুঁড়িয়ে আনিয়া তারে আমাদের গঙ্গামতির গাঁয়ে,
কবর খুঁড়িয়ে মাটির তলেতে দিলাম তাহারে শুয়ে।
জননী কাঁন্দে বাজান কাঁন্দে কাঁনলো কয়েক মাস,
সকলের সাথে এক হইয়াছে ছিলো যত বুনো ঘাস।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার কোলেতে
হে গোরস্থান !
কিছুকাল পরে টানিয়া নিয়েছো শিতল তোমার কোলে,
মোদের গাঁয়ের বাছা ওসমান হায়দার আলী-ছেলে।
কাঁচা শীতাফল ভোজন করিতে বাছা গিয়াছিল বনে,
বনে লাউলতা সর্পে ছোবল দিলো মস্তের কোনে।
বিষের যাতনা লুটিয়ে পড়িল বাছা কাঁদামাটি বনে,
কি কারনে সাপে কামড় দিয়েছে তাহা জগতে কে যানে।
ওঝা কবিরাজ যতই আসিল রাখাল পাড়া ভাই,
ওসমান দেহে পরান আনিয়া দিতে কেহ পারে নাই।
কাঁদিতে কাঁদিতে ফুরাইয়া গেল আর নাই চোখে জল,
কালের খেয়ায় আর কত সাথি হারাবে রাখাল দল ?
এক এক করে চারজন গেল আর কত দেহ যাবে?
আমাদের এই পাড়ায় শান্তি ফিরিয়া আসিবে কবে ?
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার পুরীতে
হে গোরস্থান !
তুমি তারপর থামিয়া থাকনি চাইছ একটি যান,
হাতছানি দিয়ে ডেকেছ গনির দেহ ছেড়ে নিতে প্রান।
সেদিন বিকালে ওরা গিয়েছিল সবাই গহিন বনে,
জীবিত ফিরিয়া এসেছে সবাই পারে নাই গনি প্রানে।
মৌমাছির মধু আহরণ করা কাজটা সহজ ভাই !
রানীর আদেশে তাজা প্রান নিতে কৃপনতা করে নাই।
পোকার নিকট কত আকুলতা, ‘বার বার বলে যাই’
কামড়ে কামড়ে বাছা মরে গেলো, ওর দেহে প্রান নাই।
গনিরে তোমার ভিতরেই শুয়ে দিলাম লাশের ছলে,
মোদের পল্লী প্লাবিত হলো চোখ ভরা লোনা জলে।
কান্না কাটিতে লাভ হবে ভাই ! বল-বল-বল তবে,
পৃথিবী ছাড়িয়া এক এক করে, চলে যাবো মোরা সবে।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার মেঝেতে
হে গোরস্থান !
এর কিছুদিন পরে আবারও শুরু করো ডাকা-ডাকি,
রাখাল পাড়ার নব পুত্র বধূ শিলা দিয়ে গেলো ফাঁকি।
মোদের গাঁয়ের লক্ষ্মী কন্যা হয়েছে গাঁয়ের বধূ,
মুখে ছিলো ওর সুন্দর ভাষা রূপে যেন ছিলো যাদু।
পেটে সন্তান প্রসব যাতনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,
চিৎকার দিয়ে বার বার কয়, ‘ক্ষমা করে দিও মোরে’
তাবিজ-কবজ পরাপানি আনি আরো কত কিযে দিলো,
পাষান পৃথিবী করল না দয়া তবু শিলা চলে গেলো।
সেই বেদনায় কাঁন্দে সবাই, গাছ-পালা তরু-লতা,
বলব কি আর ! এ জীবনে আছে, শত বেদনার কথা।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার থাবায়
হে গোরস্থান !
কয় দিন পরে নিলা তুমি কারে ! সেতো একজোড়া শিশু,
‘মা’ তো আর নাই শিশু জোড়া ভাই, চলে কার পিছু পিছু ?
সুরে সুরে কাঁদে অবুজ কন্যা উঠতে মায়ের কোলে,
সে বিদায় নিয়ে চলে গেছে আগে কঠিন মাটির তলে।
কন্যা শিশুর অবুজ কন্ঠে ‘ওয়াও... ওয়াও...’ রবে,
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে কাঁদে, কাঁদে এ পাড়ার সবে।
জননী সোহাগ জোটেনি কপালে তোমার সোহাগ দিও,
আদর যতেœ দোলনায় দুলে ঘুম পারাইয়া নিও।
বল বল বল
কত দেহ নিবা তোমার ভিতরে
হে গোরস্থান !
দোহাই লাগে ও..হে গোরস্থান দোহাই দিলাম তোরে,
ডাকিস না আর পাড়ার কারোরে নিতে হয় নিস মোরে।
তোর কাছে এক অনুরোধ মোর শেষ বিদায়ের কালে,
আমাদের পাড়া ভাসাইস না আর নয়নের লোনা জলে।
নিয়তি কতটা নির্মম বুঝা হয়েছে বড়ই দায়,
এত যন্ত্রনা কেমন করিয়া ছোট্ট মনুরে দেয় ?
এসো ভাই এসো হাত জোড় করে, মোরা দোয়া করি তবে,
মাটির ভিতরে শুয়ে আছে যারা, যেন সুখে থাকে সবে ।।
-----****-------
(কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রতিটি চরণে ৩টি পূর্ণ পর্ব এবং ১টি অপূর্ণ পর্ব রয়েছে।
পূর্ণ পর্বের মাত্রা ৬ এবং অপূর্ণ পর্বের মাত্রা ২। প্রতি চরণে মাত্রা ২০)।
রাখাল পাড়ার খোন্তা কোদালের বিশ্রাম নাই। কবর খুঁড়তে খুঁড়তে আর কবরের উপর বাঁশের চালি দিতে দিতে বাঁশের ঝাঁড় ফাঁকা হয়ে গেছে। শানু ঘরামীর ধারণা যেভাবে আজরাইল প্রান নেওয়া আরাম্ভ করেছে এভাবে চলতে থাকলে অন্য গ্রাম থেকে বাঁশ ধার আনতে হবে।
দিন দশের পরের কথা।
হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ক্ষিদে কি আর বেদনা বোঝে ? সকলে নিজ নিজ কাজে যোগদান করল। মনু এই কয়দিন গঙ্গামতির চরে যায় নাই। মনুর গরু-মহিষ ওরাই রাখছে। মনু গরু-মহিষ রাখতে গিয়ে পূর্বের মতো আনন্দ, ফূর্তি, দুষ্টামি করে না। রাতে একা ঘরে ঘুমাতে গিয়ে অস্তির হয়ে ঘুমায় বটে- কিন্তু স্বপ্নে বেদনার কথা ও শিশুদের কাঁন্না শুনে চিৎকার দিয়ে ওঠে। চাঁনমিয়া ঘর থেকে গিয়ে ভাইপোকে ধরতে হয়। বাকি রাত্র আর নিজের ঘরে যায় না, মনুর পাশে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে সাজু ও মজু ঘুমায় মনুর বিছানায়।
মনুর দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করে চাঁনমিয়া। চাঁনমিয়া ভাইপোকে বিবাহ করাবে কথাটা মন্দ না বটে- কিন্তু মনুর হাতে টাকা পয়সা বলতে যা ছিল, তা কিছুই নাই। এক’শ দুই’শ টাকা যা জোগার করেছিল তা প্রানের প্রিয় বউ ও শিশু কন্যাদের কাফনের কাপড় কিনতে কিনতে শেষ হয়ে গেছে। দুই এক মাসে মাহিনা পাবার সম্ভাবনাও নাই। মহাজনরা অগ্রিম টাকা দিয়েছে বিপদের সময়। ধার কর্জ করে বিবাহ করতে মনু নারাজ। মনুর সাথে রেনুর দেখা হলেই সে নিজের মনের কথা বলে দেয়। মনু সে কথা খেয়াল করে শোনে না। একটা কারন আছে, মনুর ধারণা রেনুর অভিশাপে শিলার মৃত্যু হয়েছে। বিধাতার হুকুম ছাড়া তা হতে পারে না- মনু তা ভুলে গেছে ব্যাথা-বেদনার কারনে।
একদিন সন্ধ্যা বেলা মনু চাপলীর হাট থেকে গঙ্গামতির রাখাল পাড়ায় আসার সময় রেনুর সাথে দেখা। রেনু বেড়িবাঁধের পাশে থেকে আড়াই জোড়া রাজহাঁস তাড়িয়ে আনতে গিয়েছিল।
মনুরে দেখে রেনু বলে, ‘মনু এহনও মোরে বিয়া করবি না’?
মনু কর্কশ কন্ঠে বলে, ‘তোরে মুই কোন দিনই বিয়া করমু না, তুই একটা নিলাইজ্জা মাইয়্যা’।
রেনু বলে, ‘ক্যান মনু ক্যান ? তোর লগে মুই কি দোষ হরছি ? তুই মোরে বিয়া হরবি না ক্যান’?
মনু বলে, ‘ হ্যা মুই যানি না, তোরে মুই বিয়া করমু না হ্যাইডা যানি। তুই মোরে কম জ্বালাও নাই’।
রেনু কন্ঠ নরম করে বলে, ‘মনু হারাদিন তোরে মুই চোখের সামনে দেহি’।
মনু বলে, ‘হ্যাতে মোর কি, তুই মর যাইয়্যা’।
এই বলে চলে আসল গঙ্গামতির রাখাল পাড়ায়।
*********** সমাপ্ত*********
পূর্ণ পর্বের মাত্রা ৬ এবং অপূর্ণ পর্বের মাত্রা ২। প্রতি চরণে মাত্রা ২০)।
রাখাল পাড়ার খোন্তা কোদালের বিশ্রাম নাই। কবর খুঁড়তে খুঁড়তে আর কবরের উপর বাঁশের চালি দিতে দিতে বাঁশের ঝাঁড় ফাঁকা হয়ে গেছে। শানু ঘরামীর ধারণা যেভাবে আজরাইল প্রান নেওয়া আরাম্ভ করেছে এভাবে চলতে থাকলে অন্য গ্রাম থেকে বাঁশ ধার আনতে হবে।
দিন দশের পরের কথা।
হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ক্ষিদে কি আর বেদনা বোঝে ? সকলে নিজ নিজ কাজে যোগদান করল। মনু এই কয়দিন গঙ্গামতির চরে যায় নাই। মনুর গরু-মহিষ ওরাই রাখছে। মনু গরু-মহিষ রাখতে গিয়ে পূর্বের মতো আনন্দ, ফূর্তি, দুষ্টামি করে না। রাতে একা ঘরে ঘুমাতে গিয়ে অস্তির হয়ে ঘুমায় বটে- কিন্তু স্বপ্নে বেদনার কথা ও শিশুদের কাঁন্না শুনে চিৎকার দিয়ে ওঠে। চাঁনমিয়া ঘর থেকে গিয়ে ভাইপোকে ধরতে হয়। বাকি রাত্র আর নিজের ঘরে যায় না, মনুর পাশে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে সাজু ও মজু ঘুমায় মনুর বিছানায়।
মনুর দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করে চাঁনমিয়া। চাঁনমিয়া ভাইপোকে বিবাহ করাবে কথাটা মন্দ না বটে- কিন্তু মনুর হাতে টাকা পয়সা বলতে যা ছিল, তা কিছুই নাই। এক’শ দুই’শ টাকা যা জোগার করেছিল তা প্রানের প্রিয় বউ ও শিশু কন্যাদের কাফনের কাপড় কিনতে কিনতে শেষ হয়ে গেছে। দুই এক মাসে মাহিনা পাবার সম্ভাবনাও নাই। মহাজনরা অগ্রিম টাকা দিয়েছে বিপদের সময়। ধার কর্জ করে বিবাহ করতে মনু নারাজ। মনুর সাথে রেনুর দেখা হলেই সে নিজের মনের কথা বলে দেয়। মনু সে কথা খেয়াল করে শোনে না। একটা কারন আছে, মনুর ধারণা রেনুর অভিশাপে শিলার মৃত্যু হয়েছে। বিধাতার হুকুম ছাড়া তা হতে পারে না- মনু তা ভুলে গেছে ব্যাথা-বেদনার কারনে।
একদিন সন্ধ্যা বেলা মনু চাপলীর হাট থেকে গঙ্গামতির রাখাল পাড়ায় আসার সময় রেনুর সাথে দেখা। রেনু বেড়িবাঁধের পাশে থেকে আড়াই জোড়া রাজহাঁস তাড়িয়ে আনতে গিয়েছিল।
মনুরে দেখে রেনু বলে, ‘মনু এহনও মোরে বিয়া করবি না’?
মনু কর্কশ কন্ঠে বলে, ‘তোরে মুই কোন দিনই বিয়া করমু না, তুই একটা নিলাইজ্জা মাইয়্যা’।
রেনু বলে, ‘ক্যান মনু ক্যান ? তোর লগে মুই কি দোষ হরছি ? তুই মোরে বিয়া হরবি না ক্যান’?
মনু বলে, ‘ হ্যা মুই যানি না, তোরে মুই বিয়া করমু না হ্যাইডা যানি। তুই মোরে কম জ্বালাও নাই’।
রেনু কন্ঠ নরম করে বলে, ‘মনু হারাদিন তোরে মুই চোখের সামনে দেহি’।
মনু বলে, ‘হ্যাতে মোর কি, তুই মর যাইয়্যা’।
এই বলে চলে আসল গঙ্গামতির রাখাল পাড়ায়।
*********** সমাপ্ত*********
No comments