সমুদ্রের গর্জনে ছুটে আসেন পর্যটকরা
সমুদ্রের গর্জনে ছুটে আসেন পর্যটকরা
কাজী সাঈদ॥
সমুদ্রের গর্জনে পর্যটকরা বার বার ছুটে আসেন কুয়াকাটায়। একবার আসলেই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা প্রেমের পড়ে যে কেউ। বার বার বেড়াতে আসার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই সুযোগ হলেই ভ্রমন পিপাষুরা ছুটে আসেন সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। ছোট্ট একটি গ্রাম কুয়াকাটা আজ সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র সুখ্যাতি অর্জন করেছে। বর্তমান সরকারের সু-দৃষ্টিতে ইতোমধ্যে পৌরসভা হয়েছে।
সমুদ্রের গর্জনে পর্যটকরা বার বার ছুটে আসেন কুয়াকাটায়। একবার আসলেই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা প্রেমের পড়ে যে কেউ। বার বার বেড়াতে আসার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই সুযোগ হলেই ভ্রমন পিপাষুরা ছুটে আসেন সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। ছোট্ট একটি গ্রাম কুয়াকাটা আজ সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র সুখ্যাতি অর্জন করেছে। বর্তমান সরকারের সু-দৃষ্টিতে ইতোমধ্যে পৌরসভা হয়েছে।
দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি। অপার এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার গ্রহন করেছে নানা পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালকে সরকারের তরফ থেকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি অর্জন করেছে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। সরকারের ঘোষিত পর্যটনবর্ষ সফল করতে হলে কুয়াকাটার ভূমিকা অনেক। পরিকল্পিত পরিকল্পনাই পারে কুয়াকাটার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি তথা দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীদের কাছে টানতে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ বহু আগে শুরু হলেও মূলত ১৯৯৮ সাল থেকে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ লীলাভূমি কুয়াকাটা ধীরে ধীরে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এখানে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লতাচাপলী ইউনিয়নে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা অবস্থিত। বর্তমানে পৌরসভায় উন্নিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক যোগে দূরত্ব ৩৮০ কিঃ মিঃ, বরিশাল থেকে ১০৮ কিঃ মিঃ, পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৭০ কিঃ মিঃ, কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে ২২কিঃ মিঃ। কুয়াকাটায় বিভিন্ন রুটের গাড়ী চলাচল করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে ২২ কিঃমিঃ দূরত্বে তিন নদীতে সেতু নির্মাণ হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা শহর লাগোয়া আন্ধার মানিক নদীর ওপর শেখ জামাল সেতু, সোনাতলা নদীর ওপর শেখ কামাল সেতু ও শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু তিনটি এখন পর্যটকদেন বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।
কুয়াকাটায় রাখাইন পল্লী, রাখাইন মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, দেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির, পুরানো কুয়া, বহু পুরাতন শাম্পান নৌকা, সুন্দর বনের পূর্বাংশ (ফাতড়ার বন), লেম্বুর বন, লাল কাকাঁড় চর, গঙ্গামতির চর, কাউয়ার চরসহ এখানে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্পট। কুয়াকাটায় রয়েছে ১৮কিঃমিঃ বিশাল সমুদ্র সৈকত। যেখানে দাড়াঁলে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ও সুর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য।
এ অঞ্চলের বৃদ্ধ রাখাইন ও বৃদ্ধজনর সাথে আলাপ করে জানাগেছে বহু না জানা তথ্য। তাদের মতে ২২৫বছর পূর্বে বার্মার আরাকান থেকে রাখাইন সম্প্রদায় জাতিগত কোন্দলের কারণে রাতের আধাঁরে ১৫০টি পরিবার ৫০টি কাঠের নৌকা যোগে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেয় বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ ৭দিন নৌকায় থেকে অবশেষে বসবাসের জন্য প্রথমে কক্্রবাজার, পরে হাতিয়া, সদ্বীপ, রাঙ্গাবালী, মৌডুবী এবং সর্বশেষে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় বসতি স্থাপন করেন। রাখাইনদের একটি অংশ কুয়াকাটায় আসেন। রাখাইনরা যখন এ অঞ্চলে আসে তখন ছিল গহীন বনাঞ্চল। বসবাসের জন্য রাখাইনরা ঘাটলা (বর্তমান কুয়াকাটা) নামের এ অঞ্চলটিকেই বেছে নেয়। বন্যহিংস্র প্রাণীদের সাথে যুদ্ধ করে বন আবাদ করে এই পরিবারগুলো বসবাস করত। পরবর্তীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি পাড়ায় বিভক্ত হয়ে বসবাস শুরু করতে থাকে। রাখাইনরা এ অঞ্চলটিকে আবাসযোগ্য করে তোলেন। দেখা দেখি আস্তে আস্তে বাঙ্গালীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বসবাসের জন্য এখানে আসতে শুরু করেন। আর এ কারণেই পর্যায়ক্রমে সঙ্কুচিত হতে থাকে আদিবাসী রাখাইনদের পরিধি। পরিমানে পূর্বের তুলনায় অনেক কম হলেও রাখাইনরা এখনও পূর্ব পুরুষদের পছন্দের জায়গায় বসবাস করছে।
ইতিহাস থেকে জান গেছে, রাখাইনরা দফায় দফায় হাতিয়া, সন্দ্বীপ, রাঙ্গাবালী, মৌডুবী হয়ে আসলেও বসবাস উপযোগী না হওয়ায় সর্বশেষে এ অঞ্চলে চলে। বসবাসের জন্য সবকিছু অনুকূলে থাকলেও সংকট দেখা দেয় খাবার পানির। এ সময় অঞ্জলি পরিবারের লোকজন কুয়া (কূপ) খনন করে মিষ্টি পানির সন্ধান পায়। তখন রাখাইনরা এ স্থানের নাম দেয় ক্যাঁচাই (ভাগ্য গড়ার স্থান)। এর আগে বৃটিশদের ঘাট থাকায় এর নাম ছিলো ঘাটলা। কিন্তু রাঙালীরা এসে রাখাইনদের কুয়াকে কেন্দ্র করে এই স্থানের নামকরণ করেন কুয়াকাটা।
রাখাইনদের বসতি স্থাপনের দুটি তথ্য পাওয়া গেছে। একটি ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানের ঘেমাবতি থেকে ১৫০টি রাখাইন পরিবার ৫০টি নৌকায় করে পটুয়াখালী জেলার উপকুলীয় অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। অন্যটি ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান থেকে ৩০ হাজার কর্মী উদ্ভাস্ত চট্রগ্রাম এসে আশ্রয় নেয়। তারই একটি অংশ এ অঞ্চলে চলে আসে। তবে এ অঞ্চলে রাখাইনদের দাপ্তরিত বসতি স্থাপনের তথ্য পাওয়া যায় আরও পরে। বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এইচ বিভারেজ তার (ডিষ্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ) বইয়ে (প্রথম প্রকাশ লন্ডন ১৮৭৬) লেখেন ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ জনৈক থুঙ্গারী মগ ২৩০ টি পরিবারের বসতি স্থাপনের জন্য রাজস্ব বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদর করেন। এ দ্বারাই বোঝা যায় এর অনেক আগে থেকে রাখাইনদের বসতি শুরু হয়।
কুয়াকাটার সৈকত ঃ প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া কুয়াকাটার অতুলনীয় সী-বীচ এ দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত। এখানে দাড়িঁয়ে সূর্যোদয় দেখলে মনে হয় সূর্য নয় যেন একটি অগ্নিকুন্ড পানির বুক চিরে উপরে উঠে আসছে। আবার সূর্য়াস্তের সময় মনে হবে পৃথিবীর সবটুকু আলোকে কুন্ডলী সমুদ্র ডুবে যাচ্ছে। এ সৈকতের পশ্চিম দিকে রয়েছে সুন্দর বনের পূর্বাংশ ফাতরার বন, লেবুচর, দুলবার চর, পূর্বদিকে গঙ্গামতির চর, কাউয়ার চর, ক্র্যাব ল্যান্ড, সোনার চর।
সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ঃ সূর্যোদয় দেখার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেয় পর্যটকরা। বর্তমান শীতে পর্যটকরা পূর্বদিকে ঝাউবনের সামনে এসে দাড়িঁয়ে সূর্যোদয়ের দৃশ্য অবলোকন করেন। কেউ মটরসাইকেলে বা গাড়ি নিয়ে আরও একটু পূর্বদিকে গঙ্গামতি চলে যায়। বিশাল সংরক্ষিত বনের ভিতর থেকে বেড়িয়ে সমুদ্রে মিলিত লেকের মোহনায় দাঁিড়য়ে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখেন। তবে শীতের মৌসুমে কুয়াশার কারণে উদয়-অস্ত খুব একটা ভালভাবে দেখতে পারেন না পর্যটকরা। অন্যান্য মৌসুমে চমৎকারভাবে উপভোগ করেন আগতরা। সারাদিন বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে ফিরে শেষ বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার জন্য সৈকতে ভীর জমায় দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ ডুবু ডুবু সূর্যকে হাতে নিয়ে ছবিও তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরেন।
জোয়ার-ভাটা ঃ পর্যটকরা স্থানীয় লোকজন বা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জেনে নেয় সমুদ্রে কখন জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের রূপটাই পাল্টে যায়। ঢেউগুলো আচড়ে পড়ে একের পর এক। সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের সাথে গোসলের স্বাদ জাগে সকলের। যারা সাঁতার জানেন না তারা ভাসমান টিউব ভাড়ায় নিয়ে সমুদ্রে নেমে পরেন। ভাটার সময় মৃত সাগরের সৈকতে ঝিণুক কুড়ায় কিশোর-কিশোরীরা। জোয়ারের পানি যতখানি বাড়ে ততখানি শুকিয়ে গিয়ে বিশাল সৈকত তৈরী হয়।
সমুদ্রের বৈশিষ্ট ঃ কুয়াকাটার সমুদ্রের আসল রূপ দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বর্ষাকালে। এসময় ৭/৮ ফুট উচু ঢেউ ভেঙ্গে পড়ছে একের পর এক। ঢেউয়ের মধ্যে ছোট মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারগুলো ঢেউয়ের সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে ইলিশ শিকার করার দৃশ্য পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।
পর্যটকদের সারা দিন ঃ সকালে সূর্যোদয় দেখে নাস্তা সেরে পর্যটকরা বেড়িয়ে পড়েন সংরক্ষিত বন অথবা দ্বীপগুলো দেখার জন্য। এরমধ্যে সুন্দর বনের পূর্বাঞ্চল ফাতরার বন, ফিস ল্যান্ড, ক্র্যাব ল্যান্ড, সোনার চর দেখেন নৌপথে ট্যুরিস্ট বোটে। সারাদিন বন, দ্বীপ, সমুদ্র ভ্রমন শেষে দিনটা কাটিয়ে ফেরেন বিকালের সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। দুপুরে সৈকতে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল খেলা, সমুদ্রে সাঁতার কাটেন আগত পর্যকরা। পুরো সৈকত জুড়ে পর্যটকদের থাকে পদচারণা। সবাই নতুন সাজে সী-বীচে এসে স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে ক্যামরো বন্দি হয়। বিকালটা শেষ হয় সুর্যাস্তের দৃশ্য দেখে। কুয়াকাটার সৈকতে রাতে পর্যকদের আকর্ষণ করে। আর যদি হয় চাঁদনি রাত তবে তো স্বর্গের সুখ। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতে থাকেন ভ্রমন পিপাষুরা। রাতের কুয়াকাটা উপভোগ করতে অনেকেই আড্ডায় বসেন। # # #
No comments