উপকূলের রাজনীতিতে নতুন পদ “স্বাক্ষর সচিব”
উপকূলের রাজনীতিতে নতুন পদ “স্বাক্ষর সচিব”
কাজী সাঈদ ॥
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২য় মেয়াদে টানা নয় বছর ক্ষমতায় আছে। গত ১২ জানুয়ারি সরকার প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। সুশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলেও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের তর্ক-বিতর্ক থাকতে পারে। থাকতে পারে দৃশ্যমান উন্নয়নে অদৃশ্য লুটপাটের বিতর্ক। সেই বিতর্কে আমি যাচ্ছি না। এত উন্নয়নে উপকূল কতটুকু উপকৃত হয়েছে, সেখানে আমার প্রশ্ন আছে।
যদি উন্নয়নের পূর্বশর্ত সুশাসন হয়, তাহলে আমি বলবো উন্নয়নের ছোঁয়া উপকূলে লাগেনি। সুশাসনের সাথে গণতন্ত্র শব্দটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সর্বজন স্বীকৃত। আমি গণতন্ত্রের কথা নাইবা বললাম। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বেশি বেশি বলছে। কিন্তু বিএনপির নিজ দলে কতটুকু গণতন্ত্রের চর্চা হয় সে প্রশ্নে নাইবা গেলাম।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে গেছে? এ বিতর্ক রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে টেলিভিশন টকশোতেও চলছে। বিএনপি বলছে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধানের ধারাবাহিতকতা রক্ষায় নির্বাচন। এর পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক চলছে, চলবে। উত্তর হয়তো সুযোগ পেলে দেশের ষোল কোটি জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিবে। তবে দেশের মানুষ জবাব দেয়ার সুযোগ পাবে কিনা? সর্বত্র সে আলোচনাও চলছে। আমি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমি উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ফিরে আসি শিরোনামের বিষয়ে। দেশের উন্নয়ন হলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় নিঃসন্দেহে। আওয়ামী লীগের নয় বছরে উপকূলে একটি নতুন পদের সৃষ্টি হয়েছে “স্বাক্ষর সচিব”। এ শব্দটির সাথে হয়তো কেউ পরিচিত নয়। শব্দটির সাথে পরিচয় করানোই আমার আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে দেশের স্মরণকালের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছে! এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের এক নাম্বারে আছি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব এতটাই কৃপন! আমরা এক নাম্বারে থাকলেও স্বীকৃতি দিচ্ছে না। যার হাত ধরে আমার এ সাফাল্য অর্জন করলাম তাকে একটি পুরুস্কারও দিলো না। এ আপসোস আমার মতো অনেক আমজনতাই করছে। যাই হোক, দেয় দেউক আর না দেয় দেউক, আমরা এক নাম্বারেই। কারণ আমরা যা পেরেছি তা পৃথিবীর কোন দেশ পারে নি, সাবেক স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মহাজোটে, মন্ত্রীপরিষদে এবং বিরোধী দলে। তিন ক্ষমতার মালিক পতিত স্বৈশাসক এরশাদের পার্টি।
যা বলতে চাই, ক্ষমতাসীন দলের টিকিট পাওয়া মানেই, বিজয় নিশ্চিত, গলায় ফুলের মালা। তাই নেতা কর্মীরাও জনগণের আস্থা অর্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে বড় নেতাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আর নেতাদের আস্থা বড়ই মজবুত, অর্জন করতে লাগে মোটা অংকের এক ব্যাগ টাকা। অবশ্য ভিন্নতাও আছে। বড় নেতারা যখন যোগ্যতা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয়, তখন টাকাওয়ালা জনশূন্য লোকটি কোটি কাটায় কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ক্রয় করে। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ক্রয় করা মেয়র, চেয়ারম্যান উপকূলে বেশ কয়েকজন চেয়ারে আছেন। মনোনয়ন ক্রয়ের চালান টাকা উঠানোয় ধান্দায় ব্যস্ত রয়েছেন। যাই হোক, টাকা দিয়ে হউক, আস্থা অর্জন করে হউক, আর যোগ্যতাই আসুক, আসছে। মনোনয়ন পাওয়া গেলো। নির্বাচনের অর্ধেক শেষ। বাকী অর্ধেক করবে পোলাপান। যারা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ভয়-ভীতি, প্রয়োজনে মারধর, ভোটের দিন ধাওয়া দেওয়া, তারপর ভোট ডাকাতি করবে। ভোট গ্রহণ শেষ, বিজয় মিছিল শুরু। ভোট গননা যখন শেষ হয় তখন মিছিলের কর্মীরা ক্লান্ত! বড়ই ক্লান্ত!
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২য় মেয়াদে টানা নয় বছর ক্ষমতায় আছে। গত ১২ জানুয়ারি সরকার প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। সুশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলেও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের তর্ক-বিতর্ক থাকতে পারে। থাকতে পারে দৃশ্যমান উন্নয়নে অদৃশ্য লুটপাটের বিতর্ক। সেই বিতর্কে আমি যাচ্ছি না। এত উন্নয়নে উপকূল কতটুকু উপকৃত হয়েছে, সেখানে আমার প্রশ্ন আছে।
যদি উন্নয়নের পূর্বশর্ত সুশাসন হয়, তাহলে আমি বলবো উন্নয়নের ছোঁয়া উপকূলে লাগেনি। সুশাসনের সাথে গণতন্ত্র শব্দটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সর্বজন স্বীকৃত। আমি গণতন্ত্রের কথা নাইবা বললাম। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বেশি বেশি বলছে। কিন্তু বিএনপির নিজ দলে কতটুকু গণতন্ত্রের চর্চা হয় সে প্রশ্নে নাইবা গেলাম।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে গেছে? এ বিতর্ক রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে টেলিভিশন টকশোতেও চলছে। বিএনপি বলছে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধানের ধারাবাহিতকতা রক্ষায় নির্বাচন। এর পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক চলছে, চলবে। উত্তর হয়তো সুযোগ পেলে দেশের ষোল কোটি জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিবে। তবে দেশের মানুষ জবাব দেয়ার সুযোগ পাবে কিনা? সর্বত্র সে আলোচনাও চলছে। আমি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমি উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ফিরে আসি শিরোনামের বিষয়ে। দেশের উন্নয়ন হলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় নিঃসন্দেহে। আওয়ামী লীগের নয় বছরে উপকূলে একটি নতুন পদের সৃষ্টি হয়েছে “স্বাক্ষর সচিব”। এ শব্দটির সাথে হয়তো কেউ পরিচিত নয়। শব্দটির সাথে পরিচয় করানোই আমার আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে দেশের স্মরণকালের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গেছে! এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের এক নাম্বারে আছি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব এতটাই কৃপন! আমরা এক নাম্বারে থাকলেও স্বীকৃতি দিচ্ছে না। যার হাত ধরে আমার এ সাফাল্য অর্জন করলাম তাকে একটি পুরুস্কারও দিলো না। এ আপসোস আমার মতো অনেক আমজনতাই করছে। যাই হোক, দেয় দেউক আর না দেয় দেউক, আমরা এক নাম্বারেই। কারণ আমরা যা পেরেছি তা পৃথিবীর কোন দেশ পারে নি, সাবেক স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মহাজোটে, মন্ত্রীপরিষদে এবং বিরোধী দলে। তিন ক্ষমতার মালিক পতিত স্বৈশাসক এরশাদের পার্টি।
যা বলতে চাই, ক্ষমতাসীন দলের টিকিট পাওয়া মানেই, বিজয় নিশ্চিত, গলায় ফুলের মালা। তাই নেতা কর্মীরাও জনগণের আস্থা অর্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে বড় নেতাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আর নেতাদের আস্থা বড়ই মজবুত, অর্জন করতে লাগে মোটা অংকের এক ব্যাগ টাকা। অবশ্য ভিন্নতাও আছে। বড় নেতারা যখন যোগ্যতা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয়, তখন টাকাওয়ালা জনশূন্য লোকটি কোটি কাটায় কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ক্রয় করে। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ক্রয় করা মেয়র, চেয়ারম্যান উপকূলে বেশ কয়েকজন চেয়ারে আছেন। মনোনয়ন ক্রয়ের চালান টাকা উঠানোয় ধান্দায় ব্যস্ত রয়েছেন। যাই হোক, টাকা দিয়ে হউক, আস্থা অর্জন করে হউক, আর যোগ্যতাই আসুক, আসছে। মনোনয়ন পাওয়া গেলো। নির্বাচনের অর্ধেক শেষ। বাকী অর্ধেক করবে পোলাপান। যারা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ভয়-ভীতি, প্রয়োজনে মারধর, ভোটের দিন ধাওয়া দেওয়া, তারপর ভোট ডাকাতি করবে। ভোট গ্রহণ শেষ, বিজয় মিছিল শুরু। ভোট গননা যখন শেষ হয় তখন মিছিলের কর্মীরা ক্লান্ত! বড়ই ক্লান্ত!
এই যখন হয় স্থানীয় নির্বাচনের অবস্থা তখন সুশিল সমাজের যোগ্য লোকটি আর প্রার্থী হয় না। বিরোধী দলের নেতারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে নামে। তবে বিজয় অর্জনের জন্য নয়, ফাঁকা মাঠে গোল ঠেকানোর জন্য। প্রার্থী হয়ে মাঠ নামতে পারে না। ভয়-ভীতি ও হুমকি লাগাতার চলে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় চলবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারাও কম-বেশি এ কাজ করছে।
উদাহরণস্বরূপ আমি একটি ইউনিয়নের কথা বলি। যিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনে প্রার্থী হলেন, তিনি আবার ওয়ার্ড সদস্য-সদস্যাদের নিকট মনোনয়ন বিক্রয় করলেন। যার ফলে যোগ্যতার বিচার হলো না। টাকার বিচারে ইউপি সদস্য প্রার্থী হলেন টাকাওয়ালা লোকটি। যোগ্য লোকটি দলীয় মনোনয়নের বাহিরে নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। ভোটের দিন মাঠে থাকতে পারলেন না। বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেন। যাই হোক নির্বাচন হলেন। কয়েকদিন আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলে। তারপরও আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। শিরোনামের বিষয়ে ফিরি।
শপথ নিয়ে যারা ইউনিয়ন পরিষদে এলেন। তাদের অর্ধেকের বেশি কোনমতে স্বাক্ষর দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ আছেন নিজের নাম লিখতে জানেন না। যিনি স্বাক্ষর জানেন না, তার কথা কি বলব? কিন্তু যারা শুধুমাত্র স্বাক্ষর জানেন তারা কাগজের কোন জায়গায় স্বাক্ষর দিবেন? তা কে বলবে? জনগণ নাকি যে নেতা টাকা নিয়ে মনোনয়ন দিলেন আবার ভোটে পাশ করিয়ে আনলেন? মেম্বার সাহেবের তো লজ্জা শরম আছে। পাবলিকের কাছে কোথায় স্বাক্ষর দিবেন তা তো জানতে চাইতে পারেন না। তাই একজন করে “স্বাক্ষর সচিব” নিয়োগ দিয়েছেন। সচিবের দায়িত্ব হলো পরিচয়পত্র, প্রত্যয়নপত্র, সালিশ রোয়েদাদ, সালিশ প্রতিবেদনে কোন স্থানে স্বাক্ষর দিবেন তা দেখিয়ে দেওয়া। যাই হোক স্বাক্ষর সচিব দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করছেন। এই সচিব সাহেব কিন্তু আবার স্বশিক্ষিত অথবা হাইস্কুলে যায় নি। তার ভাবখানা এমন যে তিনিই চেয়ারম্যান, তিনিই মেস্বার। এখন আমার প্রশ্ন হলো-এই সচিব সাহেবকে বেতন কে দেবে? মেম্বার সাহেব? নাকি চেয়ারম্যান সাহেব? আদৌ বেতন দিচ্ছেন নাকি অনৈতিক কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন? যাই হোক, বেতন পাক বা না পাক তিনিই সচিব।
বলা হচ্ছে ২০২১ সালে মধ্যম এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকায় পৌঁছাবো আমরা। আমিও আশাবাদী। অনেকের সাথে আমিও বিশ্বাস করি। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিকে তাকালে আমি কেন যেন বার বার হতাশ হই। আমরা কী তাহলে পিছনের দিকে যাচ্ছি। গত একদশক পূর্বেও প্রান্তিক জনপদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষিত ছিলো। এখন শুধু স্বাক্ষর জানা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা কীভাবে আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছাবো, আমার প্রশ্ন সেখানে। যদি অবকাঠামোর উন্নয়ন দিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছানো যায়, তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর চাই না।
স্বাক্ষর জ্ঞান ওয়ালা জনপ্রতিনিধি সাহেবরা আমাদের সমাজের কতটা পরিবর্তন করবেন? প্রান্তিক জনপদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা কতটুকু কাজে লাগবে? সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাবতে হবে সরকার তথা রাষ্ট্রকে। নচেৎ পিছিয়ে থাকা প্রান্তিক জনপদ আরও পিছিয়ে যাবে।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, অনলাইন সাগরকন্যা।
No comments